IN SPACE

I N S P A C E ( P a r t 1 )

IN BENGALI



• WRITER

SARJIS AMAN

দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়া ছাত্র। তিনি গল্পটি তার নতুন হাতে লিখেছেন। তিনি তেমন অভিজ্ঞ নন তবুও এই গল্পটি লেখার প্রয়াস করেছেন। তাঁর এরকমই অন্যান্য ধরনের আরো গল্প রয়েছে যেগুলো তিনি খুব শীঘ্রই প্রকাশ করবেন এর আগে তিনি নানান কবিতা গান লিখেছেন। তার এই গল্পের আরো ভাগ রয়েছে সেগুলি খুব শীঘ্রই প্রকাশ পাবে, গল্পটি তার প্রথমবার লেখা একটি গল্প সেই হিসেবে পড়ুন এবং উপভোগ করুন…



|| MAIN CHARACTERS :

লিও(Lio)- গল্পের প্রধান  চরিত্র (প্রধান নেতা)

কেয়টি (Kaity)- আর- স্পেসের মালিক।

স্টিভ্(Steve)- তৎকালীন প্রধান নেতা ।

নেলসন(Nelson)– লিওর বন্ধু।

জোসেফ(Joseph)- আর – স্পেসের প্রধান।

বাটলার (Butler)- পরিচালন  অধিকর্তা ।

আর্থার (Arthur)- স্পেস ট্রেনার।

___________________________

NOTICE

এই গল্প টা পুরোপুরি কাল্পনিক,কোনরকম সত্য ঘটনার উপর ভিত্তিক নয়। তথ্যের ওপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। সেই হিসেবে পড়ুন এবং গল্পটি উপভোগ করুন।

____________________________

Let’s read→

IN SPACE (Part 1)UNIT 1

*সবার জীবনেই একটা অসাধারণ মোড় আসে। তেমনি একটা ছেলের জীবনে এরকমই এক মোড় এসেছিল এবং একটা ইতিহাস রচনা হয়েছিল।……..

           গল্পটা শুরু হয় একটি রোদ ঝলমলে সুন্দর দিন থেকে।একটি পরিবার (মা,বাবা এবং তাদের একমাত্র ছেলে) একজায়গায় ঘুরতে

বেরোয়। সারা দিন ঘুরে দিনের শেষে বাড়ি ফেরার পথে এক রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে দাঁড়ায়। খাওয়া দাওয়া সেরে তারা বাড়ি ফেরার জন্য তৈরি হয়। ছেলেটির মা একটি অফিসে কাজ করে তাই খুব ব্যস্ত থাকেন। একদিন কোনরকমে সময় বার করে ঘুরতে এসোও শান্তি পাননি। তার অফিসের লোকেরা তাকে ফোন করে নানান কাজের ব্যাপারে, তাই তিনি ফোনে অন্যমনস্ক ছিলেন আরকি। তার মা-বাবা তার প্রতি খুব যত্নশীল ছিলেন না। তখন গাড়িতে ওঠার সময় খেয়াল করেননি যে তার ছেলে গাড়িতে ঠিকভাবে উঠেছে কিনা। তার বাবা ওদিকে সিগারেট ধরিয়ে গাড়ির মধ্যে ঢুকে বসেছিলেন তিনি তো আরোই করেননি। ওরা দুজনেই গাড়িতে উঠে পড়ে কিন্তু তার ছেলে একটা বিড়ালকে দেখে তার পিছনে ধাওয়া করে বাচ্চারা যেমন হয় আরকি। তারা গাড়িতে বেরিয়ে পড়েন,তখন ছেলেটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে। যতক্ষণ তার মা জানতে পারে ছেলেটি নেই সেই মুহূর্তে রাস্তায় ব্যাঁকের মুখে ট্রাকের সঙ্গে সজোরে ধাক্কা লাগে তারা ঘটনাস্থলেই মারা যান।

ওই ঘটনার পর ছেলেটিকে লালন পালন তার দাদিই শুরু করেন। তার দাদি একটা সাধারণ স্কুলে পড়ান । খুব কম বেতনে সংসার চালিয়েছেন ।
                (২০ বছর পর….)
                      সাল -২০৬৪
এখন ছেলেটির বয়স ২৪ বছর। তার কোনো চাকরি নেয়। তার দক্ষতা থাকলেও টাকার অভাবে কোনো কাজ পায়নি। ছেলেটি এদিক সেদিক করে টাকা জমিয়ে নানান জায়গায় বন্ধুদের সাথে রোমাঞ্চ করে বেরিয়েছে। যাকে বলে explore করা। কিন্তু এখন আর তার রোমাঞ্চ করার সাধ্য নেই। এখন শুধু ওর অন্য চিন্তা।
এখন সে তার বন্ধুর সাথে রাস্তার ধারে এক private limited কোম্পানির বিশাল বিল্ডিং এর দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছেলেটির নাম লিও( Lio)।

লিও– কী করবো বলতো?
  (বিল্ডিং এর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল)
লিওর বন্ধুর নাম নেলসন ( Nelson)।
নেলসন– কীসে কি করবি?
লিও– এবার কিছু একটা করতে হবে বুঝলি।
নেলসন–মানে!                                                           (লিওর দিকে তাকিয়ে বলল)
লিও– ঘুরে বেড়িয়ে আর লাভ নেই। নিজের পায়ে এবার দাঁড়াতেই হবে। দাদির বয়স হয়েছে , আর পারেননা। একটা চাকরি খুঁজতেই হবে।
নেলসন– হুম! আমি তো তোকে অনেক আগেই বলেছিলাম ,তুইই তখন আমার কথার গুরুত্ব দিসনি।
লিও– হ্যাঁ রে ভুল করেছি ।
নেলসন– হ্যাঁ , এবার চাকরি টা খোঁজ।
লিও– কোথায় পাব?
নেলসন– আমি কি করে জানবো!
লিও– তবে কোথায়.. তোর ব্যাংকে যদি-
নেলসন– না রে লিও , কোনো চান্সই নেই।
সব টাকার খেল। আমি যে কতটা টাকা দিয়েছিলাম তা আমিই জানি। খাটিয়ে মারে, তবু সঠিক বেতনটা দেয় না। তোর সাধ্যের বাইরে।
লিও– না কিন্তু…
নেলসন– মাফ করবি রে তোর সাহায্য করতে পারলে ভালো হতো কিন্তু আমার অবস্থা খুবই খারাপ । মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকা লাগবে তাই তোকে দিতে পারবোনা।
লিও– না না ঠিক আছে তুই আমার অনেক সাহায্য করেছিস ।আর লাগবে না।
নেলসন– অন্য কোন সাহায্য লাগলে বলিস।
এখন আমি যাই , বাড়ি ফেরার পথে হাসপাতালে যেতে হবে।
লিও– হ্যাঁ তুই যা পরে কথা হবে।
নেলসন– আসি রে !
           ( নেলসন বাড়ির পথে হাটা দিল।আর লিওর মোনে এখন ওই চিন্তা। সেও এবার বাড়ির পথে রওনা হলো।)
                       কিছু দিন পর…
নেলসন – কি করছিস ভাই..
            ( মাঝরাতের পরে তাকে ফোন করেছে)
লিও – রাত ৩ টে বাজে পাগল। ফোনটা রাখ !
নেলসন– লিও একটা কাজ আছে করবি?
লিও– কি কাজ ?
নেলসন– একটা কলিং এজেন্টের কাজ।
লিও– চলবে, কিছু একটা হলেই হবে ।
নেলসন– কাল সকালে দেখা হবে রাখছি।
লিও– দেখা যাক!
( পরের দিন সকালে সেই কম্পানির অফিসে গিয়ে)
নেলসন– ওই লিও Be smart ।
লিও– হুম!
নেলসন – কথা বলতে হবে বেশি করে।আর কথা বার্তায় চালাকি দেখাতে হবে কিন্তু।বলবি এই কাজে আমি জিবন ঢেলে দেবো, আমার আর কোনো লক্ষ্য থাকবে না আমার এখন এটাই কাজ।
                      ( অস্বাভাবিক ভাবে হাঁপাতে লাগলো নেলসন)
লিও – ( অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বলল-)
আমার মনে হয় না এসব…মানে এত কিছু বলতে হবে।
নেলসন– তুই কিছু জানিস না, বলতে হবে।
লিও– ঠিক আছে।
(লিও এখন কম্পানির Boss এর সামনে বসে)
Boss– (লিওর ডকমেন্টস্ গুলো একবার দেখে রেখে দিলেন)লিও, তাই তো?
লিও– আঞ্জে হ্যাঁ ।
Boss– আমি এই সব কাগজে গুরুত্ব দিইনা।
মানুষটাকে দেখি। তা তুমি কি কাজটা করতে পারবে।
লিও– নিশ্চয় পারবো। আমি..
নেলসন– ওই কী বলেছিলাম!
লিও– কী..
নেলসন– কী মানে?
( লিও কিছুক্ষন ভেবে বন্ধুর কথামত করার চেষ্টা করলো)
লিও– আমি নিশ্চয় পারবো। আপনি চিন্তা করবেন না।
Boss– তাই
লিও– আমি বলছি আপনাকে , আপনি জানেন না আমি কতটা দক্ষ।
নেলসন– এ খুব দক্ষ ছেলে
লিও– হ্যাঁ । মানে এসব কাজ…
নেলসন– এ সব কাজ ও দারুন পারে, অনেক করেছে ।
Boss– অনেক করেছে
লিও– ভাই চুপকর
নেলসন– দাঁড়ানা! এ আগেও করেছে , আরে কাজটা ভালো করেই করবে। সরকারি চাকরি ছেড়ে আপনার কাছে এসেছে।
Boss– চাকরি ছেড়ে মানে
লিও– মানে স্যার
নেলসন– হ্যাঁ
লিও– চু….প
Boss– চাকরি ছাড়নি , নিশ্চয়, নিশ্চয় তোমাকে বার কোরে দিয়েছে…
নেলসন –অনেক চাকরি ছেড়েছেএর জন্য
Boss– কীসের জন্য?
নেলসন– কীসের..
লিও– তুই মার খেয়েছিস এবার
Boss– কি সব বলছো! তোমার নিশ্চয় সুবিধের নয়।
লিও– না স্যা…
Boss– বেরিয়ে যাও এখান থেকে
নেলসন– না না ভুল ভাবছেন
Boss– একদম না । বেরও বেরিয়ে যাওওওওও      
  আর কি, সোজা বাইরে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। লিও নেলসনের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে।
নেলসন – কী?
লিও– আরো করো চালাকি
নেলসন – মানে!
লিও – তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল..
নেলসন– না মানে
লিও– আরেকটা সুযোগ হাতছাড়া হলো
নেলসন– আমি তো ভাবলাম ব্যাপারটা আমি সামলে নেব।
লিও– আমি তো ছিলাম,নাকি। তুই কথা বলতে গেলি কেন।
নেলসন– তুই তো কিছুই বলছিলিস না। ভাবলাম বললে সুবিধা হবে
লিও– রাখ তোর সুবিধা। গেল সব ভেস্তে।
নেলসন– আমিই তোকে কাজটার ব্যাপারে বললাম, আর তুই আমারই ওপর চটছিস। তা তুই থাক আমি গেলাম।
লিও – আরে যা যা
  নেলসন রেগে বাড়ি পথে হাঁটলো, লিও এদিকে বিরক্ত হয়ে উল্টো দিকে হাঁটা দিল।
        বিকেল হয়ে গেছে। সূর্যের কাজ যেন শেষ, পশ্চিম দিকে ডুবু ডুবু। লিও পাশের একটি পার্কে গিয়ে গাছের তলায় থাকা একটি বেঞ্চ বসলো।সে হতাশ তা আর জানতে বাকি থাকে না। লিওর জীবনে এরকম ওঠাপড়া লেগেয় থাকে, কিন্তু এখন যেন সে সব আশায় ছেড়ে দিয়েছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এই অবস্থা। সে জানে না এখন সে কি করবে।এত চেষ্টা করার পরও সে ব্যার্থ।

এইসবই ওর মাথায় তখন ঘুরছে।সে ভাবছে, এই অসাধারণ গোধূলিতে তার এই সাধারণ জীবন এখন সংকটে।
লিও– কী হবে আমার? কী করবো? দাদি বয়স হয়েছে আর পারেনা, তাও খেটে চলেছে। তাঁর চাকরিও আর বেশি দিন নেয়। তার পর কি হবে?
         একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে..
লিও– দাদির কোথায় বিশ্রামের দরকার, তা ছেড়ে…
    ( লিওর চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়লো, এই আধুনিক দুনিয়ায় কাজ পাওয়াটা যে কত কঠিন তার চায়তে আর ভালো আর কেউ জানে না।)
     এই ব্যস্ত শহরে বিকেল বেলায় সে একা বসে।সব যেন থেমে গেছে , গাছের একটা পাতাও নড়ে না। হঠাৎ এই শান্ত পরিবেশ ভঙ্গ করে একটা গলার আওয়াজ উঠে এল..
     “আমি তোমার সাহায্য করতে পারি”
আওয়াজটা শুনে লিও চারিদিকে তাকিয়ে দেখে। কেও নেয় আশেপাশে। তখনই লিওর পাশে থাকা গাছের পাশ থেকে একটি যুবতী মেয়ে বেরিয়ে এলো। সে এসে লিওর বেঞ্চে বসলো।
সে বলল- “আমি তোমার সাহায্য করতে পারি”।
লিও– তুমি কে?
সে বলল- আমার নাম কেয়টি ( Kaity)।
লিও– কীসের সাহায্য?
কেয়টি– ওই যার কষ্টে ভুগছো।
লিও– যার কষ্টে ভুগছি… ও।তা তুমি কীভাবে কষ্ট দূর করবে, মানে সাহায্য করবে।
কেয়টি– করবো।
লিও– তা তুমি আমার সাহায্য করবেই বা কেন, মানে তোমাকে তো
কেয়টি– চেনোনা, আরে চিনে যাবে । আর তোমাকে সাহায্য করবো,কারণ.. মানে তোমার সাহায্য করার জন্যই তো এসেছি।
লিও– ওওও, ঠিক আছে , কিন্তু তুমি আমাকে
কেয়টি– চিনি কিনা‌, আরে চিনি । তা না হলে কি এমনি এমনি এসেছি নাকি।
     তোমার নাম লিও। ছোটবেলায় মা বাবাকে হারানো ছেলে। দাদি সংসার চালান, তিনিই লালন পালন করেছেন, তিনি ছাড়া আর কেউ আপনজন নেই। এখন চাকরির খোঁজে,আর আজ চাকরির খোঁজে গিয়ে দফারফা করে চলে এসেছে।
    (মেয়েটি লিওর নাম,ধাম গড় গড়িয়ে বলে গেল।সে মেয়েটির দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে)
লিও – তুমি কীভাবে জানলাম?
কেয়টি– জানি। কেন..সে এক লম্বা গল্প পড়ে বলবো। তুমি দুনিয়ার কতকী রোমাঞ্চে গেছো, আরও করতে শুধু টাকার অভাবে হয়তো পারবে না। তোমার দক্ষতা আছে কিন্তু গুরুত্ব নেয়।
লিও– আমার দক্ষতা আছে সেটা কি করে বুঝলে?
কেয়টি– আমার তোমায় অনেক দিন ধরে দেখেছি, মানে follow করেছি যাকে বলে।
লিও– কেন, মানে কীসের জন্য? তোমার আমাকে follow করছিলে কেন?
কেয়টি– আমি R-SPACE এর দায়িত্বে আছি।
লিও– কী R-SP‌‌ACE ? সেটা কি?
( মেয়েটি তখন একটি blank কার্ড বার করে এবং তার ওপর দুবার ছোঁয় আর তখনই কর্ডটিতে মেয়েটির নাম, ছবি ও R-SPACE এর নাম জ্বলে ওঠে।)
কেয়টি– R-SPACE একটা রিসার্চ সেন্টার ও space এজেন্সি।
লিও– ওওও!
কেয়টি – space এর সর্ম্পকে কৌতুহল আছে।
লিও– অনেক। এর সম্পর্কে অনেক, অনেক প্রশ্ন আছে, অনেক কিছু জানতে ইচ্ছে করে।
কেয়টি– বেশ তো, তাহলে চলো আমাদের সাথে। তোমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর হয়তো পেয়ে যাবে।
লিও– কোথায় যাব?
কেয়টি– কালকে জানতে পারবে।
       (মেয়েটি এবার আরেকটি blank কার্ড বার করে লিওর গলার কাছে ধরলো এবং তখনই কর্ডটিতে লিওর নাম, ধাম, ঠিকানা জ্বোলে উঠলো। আর কার্ডটি থেকে একটি ফিতে বেরিয়ে এলো এবং লিওর গলায় ঝুলে গেল।)
লিও– এটা আমার!
কেয়টি– তবে কাল Join করো।
লিও– কিন্তু আমি ছাড়া দাদির…
কেয়টি– দাদির চিন্তা করতে হবে না। আমার আইরা তোমার দাদির খেয়াল রাখবে। কোনো অসুবিধা হবেনা।
লিও– সত্যি! কিন্তু..
কেয়টি– আরে তোমাকে চিন্তা করতে হবে না, বলছি তো। এইটুকু ভরসা করতে পারো।
        তবে ঠিক আছে, কাল তোমার বাড়ির সামনে ঠিক ৯ টায় আমার গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকবে তোমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তুমি তৈরী থাকবে কেমন।
লিও– হ্যাঁ!
     ( লিও এতক্ষণ মেয়েটির দিকে একভাবে তাকিয়ে তার কথা মোন দিয়ে শুনছিলো।)
কেয়টি– লিও…লিও! ঠিক আছে তো
              (লিও হুঁস ফিরিয়ে মাথা নাড়ল)
লিও– জানিনা কেন, তাও ধন্যবাদ।
কেয়টি– জানি এত তাড়াতাড়ি ভরসা করাটা মুস্কিল, তবু ভরসা তোমাকে করতে হবেই। আর হ্যাঁ আমাদের ধন্যবাদের দরকার নেয়, তোমার দরকার।
                   (বলে মেয়েটি চলে গেল।)
লিও– দেখা যাক কী হয়।
           (মেয়েটি যা বলে গেল তা যদি সত্যি হয়, তাহলে লিওর জীবন বদলাবে। এইটুকু তো লিও বুঝতে পেরেছে।) 

সকালে লিও এক নতুন উদ্যমে উঠেছে। সে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। প্রায় ৯ টা বাজে, ইতিমধ্যে কিছু লোক আর আইরা এসে হাজির। বাইরে দাঁড়িয়ে আছে এক লম্বা গাড়ি, যা বেশ দামি বলতে হয়।
লিও দাদির কাছে গেছে ওনাকে বিদায় জানাতে।
লিও– দাদি আমি এলাম, তুমি থাকো ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করো না ওরা তোমার খেয়াল রাখবে।
দাদি– আমি আমার খেয়াল রাখতে পারি ওদের লাগবে না।
লিও– আরে আমি জানি তুমি এখনও শক্ত পোক্ত আছো, তবুও ওরা থাকবে। তোমার কোন অসুবিধা হলে ওরা আছে।
দাদি– আরে বাবা ঠিক আছে। সাবধানে যাস, জানিনা কোথায় যাচ্ছিস আর কিইবা করবি কিন্তু তোর ওপর আমার ভরসা আছে।
লিও– ঠিক আছে ।আমি আসছি ওরা অপেক্ষা করছে।
( লিও ঘর থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে এসে দাঁড়ালো।)
কেয়টি– GOOD MORNING!
লিও– Good… morning
কেয়টি– তবে যাওয়া যাক।
লিও– হ্যাঁ নিশ্চয়।
গাড়ি বেরিয়ে পরলো। লিও কোথায় যাচ্ছে তা তা লিও জানেনা, কী করবে তাও জানেনা। মনে সংশয় আছে তবুও ভরসা করছে , কারন তার আর পিছনে ফিরলে হবে না।
বাজে প্রায় ১২:৩০, প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে গাড়ি চলছে। লিওর চোখ চোখ লেগে গেছে। হঠাৎ গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ল। কেয়টি বাইরে বেরিয়ে লিও কে হাঁক দিল।– “লিও ওঠো , পৌঁছে গেছি।”
লিও– হ্যাঁ..হ্যাঁ..
( লিও তড়িঘড়ি করে উঠে বাইরে তাকিয়ে দেখে)
চারিদিকে রোদ ধু ধু করছে, কাছে দুরে পাহাড় দেখাযাচ্ছে । দুই একটা জীর্ণ গাছ , আর বালি কাঁকড় ছাড়া কিছুই নেই।
লিও এসব দেখে হকচকিয়ে গেছে, সে ভাবছে – এই শুকনো খটখটে জায়গায় সে করছে কী ? কোথায় সেই এজেন্সি, তাহলে কী তাকে ফাঁসানো হলো? লিও এসব ভাবছিল তখনই কেয়টি হাঁক দিল–
“কী হলো বেরোবে তো”
লিও– হ্যাঁ..
( লিও হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসে)
লিও বাইরে বেরিয়ে এসে দেখে – তার উল্টো দিকে একটি তিন তলার সাধারণ বাড়ি, সামনে একটা গাড়ি দাঁড়িয়ে।
লিও– লিও মোনে মোনে ভাবে “ আদও এটা সেই স্পেস এজেন্সি নয় । কীভাবে সম্ভব ! তাহলে এরাকি আমাকে… এরা কিডন্যাপার । মরেছে এ কোথায় এসে ফাঁসলাম।
কেয়টি– চলো নাকি
লিও– হ্যাঁ চলো
( লিওর হৃৎপিণ্ড এখন হাওড়া – শিয়ালদা করছে।
লিও জানেনা সে কি করবে। যদিও সে আগেও অনেক ঝুঁকি নিয়েছে , তাই এখন আবার ঝুঁকি নিয়ে সে পালাতে পারে । কিন্তু পালাবে কোথায়, চারিদিক তো খাঁ খাঁ করছে।)
কেয়টি– এদিকে আসো
লিও– এসেই যখন পড়েছি .. তখন যাওয়া যাক।কেয়টির সাথে লিও পিছন পিছন এগিয়ে যাচ্ছিল, তার এখন চিন্তার শেষ নেই। লিও দেখল কেয়টি হঠাৎ যেতে যেতে দাঁড়িয়ে পড়েছে, সে তার হাত দিয়ে হাওয়ায় কি সব ছুঁলো এবং এগিয়ে গেল আর যখনই সে এগলো তখনই হাওয়ার মধ্যে কোথায় একটা ঢুকে গেল। পুরো ব্যাপারটা লিওর মাথার উপর দিয়ে চলে গেল‌, সে আস্তে আস্তে সামনের দিকে পা বাড়ালো সেও যেন কোথায় একটা ঢুকে গেল এবং তখনই সে দেখল যেখানে ছিল তিনতলার বাড়িটা সেখানে একটা প্রায় ছোট শহর বলতে গেলে। বড় বড় অত্যাধুনিক বিল্ডিং চারিদিকে ভর্তি, কত লোক সবাই যেন খুব ব্যস্ত। আকাশে কত কি উড়ে বেড়াচ্ছে যেগুলোকে টেকনোলজির ভাষায় বলে (space ship)। এবং এই সবকিছুর মাঝে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একটি উঁচু কাচের ইমারত যাবে আর স্পেস ( R – SPACE ) লেখা জ্বল জ্বল করছে।
লিও এইসব হাঁ করে দেখছে।কেয়টি লিওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বলল – “ লিও এদিকে আসো”
লিও– এরকম টেকনোলজি আমি আগেও দেখেছি কিন্তু এত উন্নত দেখিনি। কেয়টি– হুম! এই পুরো জায়গাটা হোলোগ্রামিক বেরিয়ার দিয়ে ঘেরা। (ওরা দুজনেই এবার হাঁটা শুরু করল)। কেয়টি– কিন্তু! অন্যান্য জায়গার চেয়ে এখানকার টেকনোলজির ফারাক আছে।কারন – এই হোলোগ্রামটা সত্যি কারের দেখতে লাগে । কোনো মানুষ ওটা সত্যি কি মিথ্যে বুঝতেই পারবে না। লিও – এরকম কেন করা হয়েছে? কেয়টি– কারন এই পুরো ব্যাপারটা চোখের আড়ালে থাকায় ভালো। লিও– সরকারের অধীনে… কেয়টি– না private limited, তাইতো বললাম চোখের আড়ালে থাকায় ভালো। ‌তারপর তারা একটা গাড়িতে উঠলো যেটা খুবই Advence । এবং সেই মাঝখানে থাকা উঁচু ইমারতটির দিকে যেতে লাগল। কিছুক্ষন পরে তারা সেই উঁচু ইমারতটির সামনে এসে পৌঁছল এবং লিফ্ট দিয়ে উপরে উঠলো। ভিতরে কত লোক কত কি কাজ করছে, অত্যাধুনিক সব যন্ত্রপাতি। দেখে মনে হয় এরা বর্তমান এই আধুনিক বিশ্বের থেকেও অনেক খানি ধাপ এগিয়ে। টেকনোলজির দিকে লিও ভালোই ঝোঁক।
কিছুক্ষন পরেই তারা দেখা করল এখানকার চিফ্ স্যার জোসেফের সাথে। লোকটির বেশ বড় সড় চেহারা, বয়স ৫৫ হবে, মাথার চুল আধ পাকা এবং রয়েছে একটি মোটা গোঁফ।
জোসেফ – কেয়টি! কোথায় ছিলে? তোমার কথায়ই হচ্ছিলো।
কেয়টি– এইযে,ওনাকে আনতে।
জোসেফ – কাকে?
(লিও সামনে এগিয়ে এলো)
জোসেফ – দাঁড়াও!
( লোকটি একটি বাক্স থেকে তার চশমা বার করে পরে লিওর দিকে ভালো ভাবে তাকালেন।)
ও তুমি… তুমিই সেই ছেলেটি লিও।
লিও– আঞ্জে হ্যাঁ।
কেয়টি – হ্যাঁ স্যার।
লিও – তবে আপনিও আমাকে চেনেন।
জোসেফ – অব্যশই চিনি। তোমার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি। দাদির কাছে থাকতে তাইতো।
লিও – হ্যাঁ। মানে থাকি, না থাকি না, মানে এখনতো.. থাকি না।
জোসেফ – তুমি সাহসী, ঝুঁকি নিতে ভালোবাসো, রোমাঞ্চ জিনিসটা বেশ পছন্দ করো। তুমি একদম ফিট্ আর… বলতে হবে Handsome ও।
( লিও মুচকি হেঁসে ওনাকে ধন্যবাদ বলল।)
লিও – আ… আমি অতটাও প্রশংসার যোগ্য নয়।।
জোসেফ – তুমি বললে তো হবে না।
লিও – ঠিক আছে স্যার আমাদের যেতে হবে, আসি।
কেয়টি পাশের একটা ঘরে নিয়ে গেলো। ঘরটির বেশ বড়ো চার দেওয়ালের একটি দেওয়াল কাঁচের। যেখান থেকে বহুদূরে দেখা যাচ্ছে।
কেয়টি– লিও, তাহলে কাল থেকে তোমার ট্রেনিং শুরু হবে।
লিও– ঠিক আছে।…. কী! কীসের ট্রেনিং।
কেয়টি– হ্যাঁ ট্রেনিং তো…
লিও– না মানে আমি করবো কী?
কেয়টি– বোঝাচ্ছি, বোঝাচ্ছি। এদিকে আসো।
কেয়টি ঘরের মাঝখানে থাকা একটি কাঁচের টেবিলের পাশে এসে দাঁড়ালো আর লিও টেবিলের ওপাশে দাঁড়ালো। কেয়টি এবার টেবিলের ওপর দুবার press করলো এবং তখনই টেবিলের ওপর হলোগ্রামিক কতকি জ্বলে উঠলো। কেয়টি এবার ওই হাওয়ায় ভাসা হলোগ্রামে কয়েক জনের ছবি বার করলো।
লিও– এরা কারা?
কেয়টি– এরা হলেন মহাকাশচারী।
লিও– মহাকাশচারী।
কেয়টি– হ্যাঁ। এরা মহাকাশে নানান অভিযানে গিয়েছেন। নানান রহস্যের সমাধানও করেছেন।
লিও– ওওও। তা কী কী রহস্য।
কেয়টি– R– SPACE নামটা শুনে কি মনে হয়?
লিও – এটা আবার কেমন কথা!
কেয়টি– মহাকাশ নিয়ে ব্যাপার স্যাপার, তাইতো।
লিও– হুম।
কেয়টি– মহাকাশের নানান রহস্যের সমাধানে ও রোমাঞ্চে এরা গিয়েছে।
লিও– ওওও
কেয়টি– R-SPACE এরকম অনেক mission করেছে। একটা mission এর জন্য প্রচুর অর্থ, প্রচুর সময় এবং প্রচুর পরিশ্রম লাগে।
(কেয়টি টেবিলের পাশে থাকা একটি চেয়ারে বসলো)
এরকম অনেক দল অনেক বার মহাকাশে পাড়ি দিয়েছে। আমরা কিছু কিছু বিশেষ mission করে থাকি। যেমন আমরা বৃহস্পতি গ্রহ নিয়ে অনেক গবেষণা করেছিলাম এবং তার পর দল সেই গ্রহে পাঠানো হয়। প্রথম বার পাঠানো হয় ২০৪০ এ, তার পর ২০৪২ এ, তার পর ২০৪৭ এ। এর সবকটিই সফল হয়েছিল। । তার..পর.. শুরু হয় ইউরোনাস নিয়ে গবেষণা।
লিও– বাব্বা! সোজা ইউরোনাস। এত গ্রহ থাকতে!
কেয়টি– হ্যাঁ। ইউরোনাসে আমরা কিছু অদ্ভুত জিনিস লক্ষ্য করি। আমরা কিছু স্যাটেলাইট পাঠাই, তাদের তথ্য থেকে আমাদের মনে হয় ওখানে… হয়তো জীবনের অস্তিত্ব আছে। কিন্তু আমরা ভুলোও হতে পারি। তাই পরবর্তীতে ওই গ্রহে দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অবশেষে দল তৈরি করা হয় এবং প্রথম বার ২০৫০ সালে ইউরোনাসের উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। প্রথম বার মানুষ ওই গ্রহে পা রাখে। যারা গিয়েছিলেন তাদের অভিজ্ঞতা অসাধারণ ছিল।
এর পর ২০৫২, ২০৫৪ এবং ২০৫৭ তে শেষ যাত্রা ।
লিও– এতে কী তোমরা সফল হয়েছিলে।?
কেয়টি– প্রথমটা ঠিকঠাকই থাকে। খুব বেশি কিছু জানতে পারি না, তবে… যা জেনেছি তাও অনেক। কিন্তু তার পরে শুধু ব্যার্থতা। কেন জানি না… কেন তার পরের সবকটা মিশ্যানই ব্যর্থ হয়ে পরে। কীভাবে প্রতিবার তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তো। কোনো না কোনো অসুবিধা হতোই। কী হতো কে জানে? আমাদের শেষ দলের সাথে… যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তাদের কাওকে আমরা আর ফিরে পায়নি। কেও জানেনা কি হয়েছিল।
(কেয়টির চোখ থেকে জল ঝোরে পরলো। লিও একদম চুপ হয়ে গেল । কিছুক্ষন সব নিস্তব্ধতায় রইলো।)
কেয়টি উঠে চোখ মুছে বলল– “ তাই…তাই তোমাকে এখানে আনা।”
লিও– তাই আমাকে আনা… কেন, মানে,আমি কি করবো।
কেয়টি– হ্যাঁ, তুমি, তুমি আবার R-SPACE থেকে দল নিয়ে ওই গ্রহে পাড়ি দেবে।
( লিও কথাটা শুনে অবাক, সে হকচকিয়ে গেছে)
লিও– আমি! (লিও এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখলো)
কেয়টি– হ্যাঁ।
লিও– হে্ হে্ ।
( সে অদ্ভুত ভাবে হেসে বলল-)
আমি যাবো, এক মিনিট- আমি যাবো আবার মহাকাশে?
কেয়টি– তুমি যাবে।
লিও– মাথা খারাপ নাকি, আমি কীভাবে যাবো? মানে আমি পারবো না।
কেয়টি– তুমি পারবে। তোমার জানতে ইচ্ছে করে না এই সব রহস্যের পিছনে কি রয়েছে।
লিও– সে জানতে ইচ্ছে করে কিন্তু..
কেয়টি– আমি জানি তুমি পারবে
লিও– না না, আমার দ্বারা হবে না।
কেয়টি– হবে লিও।
( কেয়টি এগিয়ে এসে লিওর হাত ধরে বললো-)
“ দেখো লিও তোমাকে আমি বা আমরা অপ্রস্তুত করতে চায়নি, যার জন্যই তোমাকে বলা। তোমার ভয় পাওয়াটাও স্বাভাবিক, তার জন্যই তোমাকে ট্রেনিং দেওয়া হবে। তোমার মধ্যে সেই উদ্যম রয়েছে।
২০৫৭-র পর আমরা আর সাহস পাইনি দল পাঠানোর, কিন্তু তোমার সম্পর্কে জানার পর আমাদের মনে হয় তুমিই পারবে। তুমি অনেক Adventure করেছো তাই, তুমি পারবে। আর তুমি যদি রাজি না হও তাহলে… তাহলে আরও কয়েকটা বছর গেল আমাদের হাত থেকে। দেখো তোমার দরকার Adventure, আর আমাদের দরকার তোমার। তুমিই আরেকটা দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবে।
লিও– কিন্তু..
কেয়টি– দেখো ওই গ্রহে এমন কিছুতো আছে যার সম্পর্কে আমাদের জানাতেই হবে।
( লিও কেয়টির হাতটা ছাড়িয়ে সেই কাঁচের দেয়ালের দিকে এগিয়ে গেল। তার নজর বাইরের দিকে কিন্তু মন অন্য কোথাও। সে গভীর ভাবছে , তার জীবনের সব থেকে বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া পালা। কিছুক্ষন পর সে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলল)
” জীবনে অনেক ঝুঁকিই তো নিয়েছি এই শেষ ঝুঁকিটাও নিয়েই দেখি। আমিও দেখবো ওই ইউরোনাসে কী আছে”
কেয়টি– আমি জানতাম তুমি পারবে। তোমার ওপর আমার বিশ্বাস আছে লিও। ( কেয়টির মুখে হাসি ফুটেছে)
লিওর জীবনে এরকম মোড় আসবে তা যে লিও কখনো ভেবেছিল বলে মনে হয় না। তার মোনে আশংকা আছে কিন্তু তাও সে এই ঝুঁকিটা নিয়েই ছাড়বে। তার জীবন এবার বদলাতে চলেছে।

TO BE CONTINUED…

Thanks for reading😃 Hope you like the unit 1 of the story, Unit 2 will come very soon so follow the website